c„w_exi cwiµgY
|
DOWNLOAD THIS WRITING
v পৃথিবীর পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতিঃ নিজের মেরদন্ডের ওপর অবিরাম ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট পথে,
নির্দিষ্ট দিকে (ঘড়ির কাটার বিপরীতে) এবং নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারিদিকে
প্রদক্ষিণ করছে। পৃথিবীর এই গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলে। এ. এন.
স্ট্রেলারের মতে, “পৃথিবীর নিজ কক্ষে সূর্যকে পরিক্রমণ করাই হল পৃথিবীর পরিক্রমণ
গতি।”
v
পরিক্রমণ গতিকে বার্ষিক গতি বলার কারণঃ সূর্্যকে রকবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট
৪৬ সেকেন্ড। এই সময়কালকে বলে সৌরবছর। তবে, হিসাবের সুবিধার্থে পৃথিবীর সম্পূর্ণ
পরিক্রমণের সময়কে ৩৬৫ দিন ধরে প্রতি চতুর্থ বছরের দিনসংখ্যার সঙ্গে ১ দিন যগ করে
৩৬৬ দিন ধরা হয়। এইভাবে, পরিক্রমণ গতির মাধ্যমে বছর নির্ধারিত হয় বলে পরিক্রমণ
গতির আর এক নাম বার্ষিক গতি।
v
পরিক্রমণের সময় পৃথিবীর মেরুরেখার
অবস্থানঃ সূর্্য পরিক্রমণের সময় পৃথিবীর মেরুরেখাটি তার কক্ষতলের সঙ্গে সমকোণে না থেকে প্রায় ৬৬১/২0 কোণে হেলানো ভাবে অবস্থান করে। এর ফলে বছরের ৬ মাস পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ এবং
বাকি ৬ মাস পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে ৬৬১/২0 কোণে কাত হয়ে থাকে।
v
সৌর বৎসর বা সৌরবর্ষঃ একবার সূর্যকে পূর্ণ পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬
সেকেন্ড বা প্রায় ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা সময় লাগে, একে সৌর বৎসর বা সৌরবর্ষ বলে।
v
মহাকর্ষঃ এই মহাজগতের প্রতিটি বস্তুই পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে বা নিজের দিকে টানে, একেই মহাকর্ষ বলে।
v
মাধ্যাকর্ষণ বলঃ যে আকর্ষণ বলের প্রভাবে পৃথিবী
তার মধ্যস্থিত প্রতিটি বস্তু ও পদার্থকে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে, তাকে
মাধ্যাকর্ষণ বল বলে।
v
পৃথিবীর অনুসূর অবস্থানঃ
à সংজ্ঞাঃ ৩ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে সূর্্যের দূরত্ব সবচেয়ে কম হয় (১৪ কোটি ৭০ লক্ষ
কিমি), একে অনুসুর অবস্থান বলে।
à
সৃষ্টির কারণঃ পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিমি। কিন্তু
পৃথিবী যেহেতু উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তাই এই দূরত্ব সব সময়
সমান থাকে না, কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে।
v পৃথিবীর অপসূর অবস্থানঃ
à সংজ্ঞাঃ ৪ জুলাই পৃথিবী থেকে সূর্্যের দূরত্ব সবচেয়ে বেশি হয় (১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি),
একে অপসূর অবস্থান বলে।
à সৃষ্টির কারণঃ পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিমি। কিন্তু পৃথিবী যেহেতু
উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তাই এই দূরত্ব সব সময় সমান থাকে না,
কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে।
v পৃথিবীর অনুসুর ও অপসূর অবস্থানের ফলাফলঃ
1/ জানুয়ারি মাসে সূর্যকে একটু বড়ো ও
জুলাই মাসে সূর্যকে একটু ছোটো দেখায়।
2/ অনুসূর অবস্থানে পৃথিবীর সূর্য
পরিক্রমণের বেগ বাড়ে এবং অপসূর অবস্থানে কমে।
3/ এই কারণে উত্তর গোলার্ধে শীতকালের
তুলনায় গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব এক সপ্তাহ বেশি হয়।
v
অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ারঃ যে বছর ফেব্রুয়ারি
মাসের দিন সংখ্যা ১ দিন বাড়িয়ে (২৮ + ১ = ২৯ দিন) বছরটিকে ৩৬৬ দিন করা হয়, তাকে
অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার বলে। ইংরেজী 2016 সাল লিপ ইয়ারের উদাহরণ।
v
ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বিঞ্জানীরা আন্টার্কটিকা অভিযান করেনঃ ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সূর্্যের দক্ষিণায়ন চলতে থাকে। আন্টার্কটিকা দক্ষিণ
মেরুতে অবস্থিত। তাই আন্টার্কটিকা বরফে ঢাকা থাকলেও শীতের তীব্রতা অপেক্ষাকৃত কম
থাকে বলেই এই সময় বিঞ্জানীরা আন্টার্কটিকা অভিযান করেন।
v
অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকালে বড়োদিন উৎসব পালিত হয়ঃ ২৫ ডিসেম্বর বড়োদিন। এই তারিখে উত্তর গোলার্ধে শীতকাল থাকলেও দক্ষিন গোলার্ধে
গ্রীষ্মকাল। অস্ট্রেলিয়া দক্ষিন গোলার্ধে অবস্থিত। তাই অস্ট্রেলিয়াসহ সমগ্র দক্ষিন
গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে বড়োদিন উৎসব পালিত হয়।
v
ঋতুচক্রঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত, বসন্ত—এই চারটি ঋতু পরপর আবির্ভূত
হয়, একেই ঋতুচক্র বলে।
v
উত্তর ও দক্ষিন গোলার্ধের ঋতুচক্রঃ
পরিক্রমণের সময়
|
উত্তর গোলার্ধের ঋতুচক্র
|
দক্ষিন গোলার্ধের ঋতুচক্র
|
২১ মার্চ থেকে ২১ জুন
|
গ্রীষ্মকাল
|
শীতকাল
|
২১ জুন থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর
|
শরৎকাল
|
বসন্তকাল
|
২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর
|
শীতকাল
|
গ্রীষ্মকাল
|
২২ ডিসেম্বর থেকে ২১ মার্চ
|
বসন্তকাল
|
শরৎকাল
|
v ছায়াবৃত্ত বা আলোকবৃত্তঃ পৃথিবী গোলাকার। তাই আবর্তনের সময়
পৃথিবীর সর্বত্র একই সময় সূর্যের আলো পড়ে না—এক অর্ধাংশ যখন সূর্যের আল পায়, তখন
অপর অর্ধাংশ অন্ধকার হয়ে থাকে। এই আলোকিত ও অন্ধকার অর্ধাংশ যে বৃত্তাকার
সীমারেখায় মিলিত হয়, তাকে ছায়াবৃত্ত বা আলোকবৃত্ত বলে।
v ছায়াবৃত্ত সৃষ্টির কারণঃ সূর্য পরিক্রমার সময় নিজের
মেরুরেখা বা মেরুদন্ডের ওপর নির্দিষ্ট গতিতে একবার পৃথিবীর আবর্তনের ফলে দিন ও
রাত্রির সীমানা বৃত্তাকার রেখায় মিলিত হওয়ার ফলেই ছায়াবৃত্ত সৃষ্টি হয়।
v ছায়াবৃত্তের ঋতুভিত্তিক তারতম্যের কারণঃ পৃথিবীর (১) অভিগত গোলাকৃতি ও উপবৃত্তাকার কক্ষপথ,
(২) অবিরাম আবর্তন ও পরিক্রমণ, (৩) মেরুরেখার একমুখী অবস্থান এবং (৪) সূর্য
প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবীর মেরুরেখা ও কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬১/২০
কোণে অবস্থান করে—প্রভৃতি হল ছায়াবৃত্তের ঋতুভিত্তিক তারতম্যের কারণ।
v নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা গ্রীষ্মকাল থাকেঃ ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে ঋতু পরিবর্তনের কারণ হল বছরের বিভিন্ন সময়ে তাপের পার্থক্য। নিরক্ষীয় অঞ্চলে
সর্বদা গ্রীষ্মকাল, সেখানে শীতঋতু নেই। এর কারণ হল, নিরক্ষরেখা পৃথিবীর ঠিক
মাঝখানে অবস্থিত বলে নিরক্ষরেখার ওপর সারাবছর দিন-রাত্রি সমান (১২ ঘণ্টা দিন ও ১২
ঘন্টা রাত) হওয়ায় নিরক্ষীয় অঞ্চলে বছরে কখনো ঋতু পরিবর্তন হয় না। এই অঞ্চলে
সূর্যরশ্মী বছরের সবসময় প্রায় লম্বভাবে পড়ে (২১ মার্চ ও ২৩ জানুয়ারি সূর্যরশ্মী
নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে)। এই সময় দিনের বেলায় নিরক্ষীয় অঞ্চল যে তাপ গ্রহণ
করে রাতে সেই তাপ পুরোটা বিকিরণ করতে পারে না, ফলে এই অঞ্চলে তাপ সঞ্চিত হয়ে
আবহাওয়া উষ্ণ হয় এবং গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি ও
সূর্যরশ্মীর পতন কোণের পার্থক্য ঘটে না বলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা উত্তাপ বেশি
থাকে এবং আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে।
v দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির কারণঃ বিভিন্ন কারণে
পৃথিবীতে দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। যেমন—(১) পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতি, (২)
পৃথিবীর আবর্তন ও পরিক্রমণ গতি, (৩) পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ, (৪) পৃথিবীর
মেরুরেখা কক্ষতলের ওপর ৬৬১/২০ কোণে অবস্থান
ইত্যাদি।
v পরিক্রমণ গতির ফলাফলঃ পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির মূলত তিনটি
ফল লক্ষণীয়—(১) ঋতু পরিবর্তন, (২)
দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি এবং (৩) সূর্যের দৈনিক আপাতগতি।
v
সূর্যের বার্ষিক আপাতগতিঃ পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির ফলে আকাশে
সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি লক্ষ্য করা যায়। সূর্যের এই আপাত বার্ষিক গতি উত্তরে
কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে দক্ষিনে মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ২১ জুন
থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সূর্য একটু একটু করে দক্ষিনে সরে যায়। আবার ২২
ডিসেম্বরের পর থেকে সূর্য ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরে যায়। সূর্য ২১ জুন
কর্কটক্রান্তি রেখা, ২৩ সেপ্টেম্বর নিরক্ষরেখা এবং ২২ ডিসেম্বর মকরক্রান্তি রেখার
ঠিক ওপরে অবস্থান করে। সূর্যের এই বার্ষিক গতিপথকে রবিমার্গ বা সূর্যের আপাত
বার্ষিকগতি বলে।
à প্রভাবঃ (১) রবিমার্গের সঙ্গে সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের ঘটনা জড়িত। (২) চাপ
বলয়ের সীমানা পরিবর্তনে ভূমিকা থাকে। (৩) উত্তর ও দক্ষিণ গলার্ধে তাপমাত্রার
পরিবর্তনেও বিশেষ ভূমিকা লক্ষনীয় হয়।
v বিষুবঃ ‘বিষুব’ কথার অর্থ দিন-রাত্রি
সমান। যে যে তারিখে বা দিনে পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত্রি সমান হয়, সেই তারিখ বা
দিনগুলিকে বিষুব বলে। এই দিনগুলি হল, ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর।
à উৎপত্তিঃ পরিক্রমণকালে পৃথিবী ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর কক্ষপথের এমন স্থানে পৌঁছায় যে—(১)
মধ্যাহ্নে সূর্যরশ্মী নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পতিত হয়, (২) উত্তর ও দক্ষিণ
গোলার্ধ সূর্য থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করে, (৩) পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু
একই সঙ্গে সূর্যের আলো ও উত্তাপ পায়, (৪) ছায়াবৃত্ত পৃথিবীর প্রতিটি সমাক্ষরেখাকে
সমানভাবে দ্বিখণ্ডিত করে।
à শ্রেণিবিভাগঃ বিষুব দু’ধরণের হয়—(১) মহাবিষুব ও (২)জলবিষুব।
v মহাবিষুবঃ ২১ মার্চ পৃথিবীতে দিন ও রাত্রি সমান হয়। এই সময়ে উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল
চলায় একে মহাবিষুব বা বসন্তকালীন বিষুব বলে।
v জলবিষুবঃ ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখটিতে যখন বিষুব হয়, তখন উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল চলে, তাই
এই বিষুবকে জলবিষুব বা শরৎকালীন বিষুব বলে।
v
কর্কটসংক্রান্তিঃ ২১ জুন সূর্যরশ্মী কর্কটকারন্তি
রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে সেই দিন উত্তর গোলার্ধে দীর্ঘতম দিন ও ক্ষুদ্রতম
রাত্রি সংঘটিত হয়। একে কর্কটসংক্রান্তি বা উত্তর আয়নান্ত দিবস বা গ্রীষ্মকালীন
সৌরস্থিতি বলে।
à উৎপত্তিঃ ২১ মার্চের পর থেকে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ ক্রমশ সূর্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
আপাতদৃষ্টিতে সূর্যকে উত্তরদিকে সরে যেতে দেখা যায় বলে একে সূর্যের উত্তরায়ণ বলে।
এর ফলে উত্তর গোলার্ধে দিনের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ২১ জুন তা সর্বোচ্চ সীমার গিয়ে
পৌঁছয়।
à বৈশিষ্ট্যঃ (১) উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে।
(২) সূর্যরশ্মী কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে।
à প্রভাবঃ উত্তর গোলার্ধে তাপমাত্রা বাড়ে ও দিনের সময়সীমা বৃদ্ধি পায়।
v
মকরসংক্রান্তিঃ ২২ ডিসেম্বর সূর্যরশ্মী মকরক্রান্তি রেখার ওপর
লম্বভাবে পতিত হয় বলে সে দিন দক্ষিণ গোলার্ধে দীর্ঘতম দিন ও ক্ষুদ্রতম রাত্রির
সৃষ্টি হয়। একে মকরসংক্রান্তি বা দক্ষিণ অয়নান্ত দিবস বা শীতকালীন সৌরস্থিতি বলে।
à উৎপত্তিঃ ২৩ সেপ্টেম্বরের পর থেকে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ ক্রমশ সূর্যের দিকে ঝুঁকে
পড়ে। ফলে সূর্যের দক্ষিণায়ন শুরু হয়। এইভাবে সরতে সরতে ২২ ডিসেম্বর সূর্য সর্বোচ্চ
সীমায় গিয়ে পৌঁছায় বলে মকরসংক্রান্তি সৃষ্টি হয়।
à বৈশিষ্ট্যঃ (১) দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে।
(২) সূর্যরশ্মি মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে।
à প্রভাবঃ দক্ষিণ গোলার্ধে তাপমাত্রা বাড়ে ও দিনের সময়সীমা বৃদ্ধি পায়।
v মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি বা আরোরাঃ মেরু অঞ্চলে যখন
একটানা ৬ মাস রাত্রি চলে তখন আকাশে (মূলত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০০-৬০০ কিমি উচ্চতায়)
রামধনুর মতো একধরণের ক্ষীণ আলোকপ্রভা দেখা যায়, একে মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি বা
আরোরা বলে।
à কারণঃ বায়ুমন্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তরে সূর্যরশ্মির সঙ্গে বিভিন্ন বস্তুকণা ও
অতিবেগুনী রশ্মির সংঘাতের ফলে গ্যাসীয় অণুগুলি পরমাণুতে পরিণত হয়। তখন প্রোটন ও
ইলেকট্রনের সংঘাতে তা উত্তেজিত হয়ে পড়ায় বিভিন্ন আলোকতরঙ্গ বিচ্ছুরিত হতে থাকে।
à শ্রেণিবিভাগঃ মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি দুই প্রকার—
1) সুমেরু প্রভাঃ উত্তর মেরু অঞ্চলে যখন এই আলোকপ্রভা দেখা যায়, তখন
তাকে সুমেরু প্রভা বা আরোরা বোরিয়ালিস বলে।
2) কুমেরু প্রভাঃ কুমেরু অঞ্চলে এই আলোকপ্রভাকে কুমেরু প্রভা বা আরোরা অস্ট্রেলিস
বলে।
v নিশীথ সূর্য ও নিশীথ সূর্যের দেশঃ ২১ মার্চ থেকে ২৩
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮৬ দিন সময়ে সুমেরুতে যখন একটানা দিন থাকে তখন উত্তর গোলার্ধে
সুমেরু বৃত্তের উত্তরে অবস্থিত ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের কিছু স্থান ও উত্তর কানাডার
বেশ কিছু অঞ্চলে ঘড়ির সময় অনুসারে গভীর রাতেও আকাশে সূর্য দেখা যায় ; একে নিশীথ সূর্য
বলে।
এজন্য ইউরোপ মহাদেশের উত্তর মেরুর
নিকটবর্তী নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর (৭০০৪০/ উঃ অক্ষাংশ,
২৩০৩০/ পূর্ব দ্রাঘিমা) এবং তার নিকটবর্তী অঞ্চলকে নিশীথ
সূর্যের দেশ বলা হয়। এই সময় কুমেরুবৃত্তের দক্ষিণের অঞ্চলগুলো দিনের সবসময়
অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে।
à উৎপত্তিঃ মেরুপ্রদেশে ৬ মাস দিনের সময় সূর্য
কখনোই সম্পূর্ণরূপে অস্তনমিত হয় না। দিগন্তরেখা বরাবর ঘোরাফেরা করে বলেই এমন
অবস্থার সৃষ্টি হয়।
------------- X -------------
·
পার্থক্য লেখঃ
১/ কর্কটসংক্রান্তি ও মকরসংক্রান্তি।
বিষয়
|
কর্কটসংক্রান্তি
|
মকরসংক্রান্তি
|
তারিখ
|
২১শে জুন।
|
২২শে ডিসেম্বর।
|
সূর্যকিরণ
|
এই দিন সূর্য ২৩১/২০
উঃ অক্ষরেখা বা কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়।
|
এই দিন সূর্য ২৩১/২০
দঃ অক্ষরেখা বা মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়।
|
দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য
|
এই দিন উত্তর
গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো (১৪ ঘণ্টা) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে ছোটো (১০
ঘণ্টা) হয়।
|
এই দিন দক্ষিণ
গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো (১৪ ঘণ্টা) এবং উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে ছোটো (১০
ঘণ্টা) হয়।
|
উত্তর ও দক্ষিণ
অয়নান্ত দিবস
|
এই দিন সূর্যের
উত্তরায়ণ পর্ব শেষ হয়। তাই এর আর-এক নাম উত্তর অয়নান্ত দিবস।
|
এই দিন সূর্যের
দক্ষিনায়ণ পর্ব শেষ হয়। তাই এর আর-এক নাম দক্ষিণ অয়নান্ত দিবস।
|
ঋতুবৈচিত্র্য
|
কর্কটসংক্রান্তির
সময় উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল থাকে।
|
মকরসংক্রান্তির সময়
দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং উত্তর গোলার্ধে শীতকাল থাকে।
|
২/ সুমেরু প্রভা ও কুমেরু প্রভা।
বিষয়
|
সুমেরু প্রভা
|
কুমেরু প্রভা
|
সংঞ্জা
|
উত্তর মেরু অঞ্চলে
রাতের আকাশে (মূলত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০০-৬০০ কিমি উচ্চতায়) রামধনুর মতো একধরণের
ক্ষীণ আলোকপ্রভা দেখা যায়, একে সুমেরু প্রভা।
|
কুমেরু অঞ্চলে রাতের
আকাশে (মূলত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০০-৬০০ কিমি উচ্চতায়) রামধনুর মতো একধরণের ক্ষীণ
আলোকপ্রভা দেখা যায়, একে কুমেরু প্রভা।
|
অরোরা বরিওলিস ও
অস্ট্রালিস
|
উত্তর গোলার্ধের
সুমেরু প্রভাকে বলে অরোরা বরিওলিস।
|
দক্ষিণ গোলার্ধের
কুমেরু প্রভাকে বলে অরোরা অস্ট্রালিস।
|
তারিখ
|
সুমেরু প্রভা ২৩
সেপ্টেম্বর থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত একটানা ৬ মাস আলাস্কা, উত্তর কানাডা,
আইসল্যান্ড থেকে দেখা যায়।
|
কুমেরু প্রভা ২১
মার্চ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটানা ৬ মাস দক্ষিণ গোলার্ধের জনবিরল ও
বসতিহীন অঞ্চল থেকে দেখা যায়।
|
৩/ পৃথিবীর অনুসুর ও অপসূর অবস্থান।
বিষয়
|
পৃথিবীর অনুসুর অবস্থান
|
পৃথিবীর অপসূর অবস্থান
|
সংঞ্জা
|
যখন পৃথিবী থেকে
সূর্্যের দূরত্ব সবচেয়ে কম হয়, একে অনুসুর অবস্থান বলে।
|
যখন পৃথিবী থেকে
সূর্্যের দূরত্ব সবচেয়ে বেশি হয়, একে অপসূর অবস্থান বলে।
|
সূর্্য থেকে
পৃথিবীর গড় দূরত্ব
|
অনুসুর অবস্থানের
সময় সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব থাকে প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি।
|
অপসুর অবস্থানের সময়
সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব থাকে প্রায় ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি।
|
তারিখ
|
পৃথিবীর অনুসুর
অবস্থান প্রতি বছর ৩রা জানুয়ারি তারিখে হয়।
|
পৃথিবীর অপসুর
অবস্থান প্রতি বছর ৪ঠা জুলাই তারিখে হয়।
|
পরিক্রমণ বেগ
|
সূর্য থেকে পৃথিবীর
দূরত্ব কিছুটা কম থাকায় অনুসূর অবস্থানকালে পৃথিবীর পরিক্রমণ বেগ সামান্য বাড়ে।
|
সূর্য থেকে পৃথিবীর
দূরত্ব কিছুটা বেশি থাকায় অপসূর অবস্থানকালে পৃথিবীর পরিক্রমণ বেগ সামান্য
কমে।
|
সূর্যের আকার
|
পৃথিবীর অনুসুর
অবস্থানের সময় উত্তর গোলার্ধে সূর্যকে বড়ো দেখায়।
|
পৃথিবীর অপসূর
অবস্থানের সময় উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে সূর্যকে ছোটো দেখায়।
|
৪/ পৃথিবীর কক্ষ বা কক্ষপথ ও কক্ষতল।
বিষয়
|
পৃথিবীর কক্ষ বা কক্ষপথ
|
পৃথিবীর কক্ষতল
|
সংঞ্জা
|
পৃথিবী যে নির্দিষ্ট
পথে সূর্যকে পরিক্রমণ করে, তাকে পৃথিবীর কক্ষ বা কক্ষপথ বলে।
|
পৃথিবীর কক্ষপথ যে
তলের ওপর অবস্থিত তাকে বলে কক্ষতল।
|
সংখ্যা
|
প্রতিটি নক্ষত্র,
গ্রহ ও উপগ্রহের কক্ষপথ আলাদা।
|
বিভিন্ন গ্রহ ও
নক্ষত্রের কক্ষতল এক হলেও হতে পারে।
|
আকৃতি
|
প্রতিটি নক্ষত্র,
গ্রহ ও উপগ্রহের কক্ষপথের আকৃতি আলাদা। যেমনঃ পৃথিবীর কক্ষপথের আকৃতি
উপবৃত্তাকার।
|
কক্ষতলের আকার সমতল
ক্ষেত্রের মতো।
|
------------- X -------------
W পৃথিবীর কোন্ অঞ্চলে বছরের সবসময় গ্রীষ্মকাল এবং কোন্ বছর সারা বছরই শীতকাল?
à ∎ পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা দিন-রাত্রি সমান বলে এখানে সবসময়ই
গ্রীষ্মকাল, ফলে সেখানে কোনো ঋতু পরিবর্তন হয় না।
∎ পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে স্বল্পস্থায়ী সূর্যকিরণ সর্বদা তির্যকভাবে পড়ে বলে এখানে উষ্ণতার
পরিমাণ সামান্য, তাই সেখানে সর্বদা শীতকাল।
W উত্তর গলার্ধে শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব এক সপ্তাহ বেশি কেন?
à উত্তর গলার্ধে শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব এক সপ্তাহ বেশি হওয়ার
কারণঃ অনুসূর অবস্থানে (৩রা জানুয়ারি) পৃথিবী সূর্যের অপেক্ষাকৃত কাছে থাকে বলে
পরিক্রমণের বেগ কিছুটা বেশি হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে শীতকাল। তাই শীতকালে
কক্ষপথের অর্ধেক পথ অতিক্রম করতে এক সপ্তাহ সময় কম লাগে। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে
পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব বেশি থাকে বলে কক্ষপথের অর্ধেক পথ অতিক্রম করতে এক
সপ্তাহ সময় বেশি লাগে।
W মেরু অঞ্চলে একটানা ৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত্রি হয় কেন?
à মেরু অঞ্চলে একটানা ৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত্রি হওয়ার কারণঃ কক্ষতলের ওপর পৃথিবীর মেরুরেখা সর্বদাই ৬৬১/২০
কোণে হেলে অবস্থান করায় একবার (৬ মাস) উত্তর মেরু এবং একবার (৬ মাস) দক্ষিণ মেরু
সূর্যের দিকে হেলে থাকে। ২১ মার্চ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সূর্যের উত্তরায়ণ
হওয়ায় পৃথিবীর উত্তর মেরু সর্বদাই আলোকিত এবং দক্ষিণ মেরু অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে।
আবার ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু সূর্যের
দক্ষিণায়নের জন্য সর্বদা আলোকিত এবং উত্তর মেরু সর্বদা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। এই
কারণে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে একটানা ৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত্রি হয়।
W ২৩ সেপ্টেম্বরকে জলবিষুব বলা হয় কেন?
à ২৩ সেপ্টেম্বরকে জলবিষুব বলার কারণঃ যে তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয় সেই দিনটিকে বলা হয়
বিষুব। ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে পৃথিবী নিজ কক্ষপথের এমন জায়গায় অবস্থান করে যে,
মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে এবং পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও
রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়। এই ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে উত্তর গোলর্ধে শরৎ ঋতু বিরাজ করে
বলে এই দিনটিকে জলবিষুব বলা হয়।
W ২১ মার্চকে মহাবিষুব বলা হয় কেন?
à ২১ মার্চকে মহাবিষুব বলার কারণঃ যে তারিখে পৃথিবীর
সর্বত্র দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয় সেই দিনটিকে বলা হয় বিষুব। ২১ মার্চ তারিখে
পৃথিবী নিজ কক্ষপথের এমন জায়গায় অবস্থান করে যে, মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার
ওপর লম্বভাবে পড়ে এবং পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়। এই ২১ মার্চ
তারিখে উত্তর গোলর্ধে বসন্ত ঋতু বিরাজ করে বলে এই দিনটিকে মহাবিষুব বলা হয়।
W শীতকালে সূর্যকে বড়ো দেখায় কেন?
à শীতকালে সূর্যকে বড়ো দেখায়ঃ শীতকালে (জানুয়ারি মাসে) পৃথিবী
অনুসূর অবস্থানে থাকায় পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দূরত্ব কমে যায় (প্রায় ১৪ কোটি ৭০
লক্ষ কিমি)। এই সময় পৃথিবী সূর্যের কাছে চলে আসে বলে পৃথিবী থেকে সূর্যকে একটু বড়ো
দেখায়।
W গ্রীষ্মকালে সূর্যকে ছোটো দেখায় কেন?
à গ্রীষ্মকালে সূর্যকে ছোটো দেখায়ঃ গ্রীষ্মকালে (জুলাই
মাসে) পৃথিবী অপসূর অবস্থানে থাকায় পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায় (প্রায়
১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি)। এই সময় সূর্যের থেকে পৃথিবীর দূরত্ব বেশি হয় বলে পৃথিবী
থেকে সূর্যকে একটু ছোটো দেখায়।
W পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে আমরা পৃথিবী থেকে ছিটকে পরি না কেন? অথবা, পৃথিবীর
ওপরে থাকা সব বস্তু পৃথিবীর দিকে পড়ে কেন?
à পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে আমরা পৃথিবী থেকে ছিটকে পরি না / পৃথিবীর ওপরে থাকা
সব বস্তু পৃথিবীর দিকে পড়েঃ মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এই বিশ্বের সব বস্তুই পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তাই
পৃথিবীর ওপরে থাকা যেকোনো বস্তুকে পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নিজের
কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। এ জন্যই আমরা পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ছিটকে যাই না, পৃথিবীর
ওপরেই থাকি। একই কারণে পৃথিবীর ওপর থাকা সব বস্তু (যেমন—হাত থেকে ছেড়ে দেওয়া বল)
পৃথিবীর দিকে পড়ে।
W মুক্তিবেগ কাকে বলে?
à মুক্তিবেগঃ কোনো বস্তুকে প্রতি সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার গতিবেগে
ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে ছুঁড়লে বস্তুটি পৃথিবীর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ কাটিয়ে বাইরে
চলে যায় এবং সেটি নীচের দিকে না পড়ে মহাশূণ্যে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরতে থাকে, একে
মুক্তিবেগ বলে। উদাহরণঃ রকেটের সাহায্যে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয় এই
মুক্তিবেগের সাহায্যে।
W নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা গ্রীষ্মকাল কেন? অথবা, নিরক্ষরেখায় কেন ঋতু পরিবর্তন
হয় না?
à নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা গ্রীষ্মকাল বা নিরক্ষরেখায় ঋতু পরিবর্তন হয় নাঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে কোনো ঋতু পরিবর্তন হয় না, সর্বদাই এখানে গ্রীষ্মকাল, কারণঃ
(১) নিরক্ষরেখার ওপর সারা বছরই দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান (১২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা
রাত্রি)। (২) সারা বছরই এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে বছরের সব সময়েই এই
অঞ্চলের তাপও হয় প্রবল। (৩) সারা বছর ধরে উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি ও সূর্যরশ্মির পতন
কোণের পার্থক্য ঘটে না বলে সারাবছরই নিরক্ষীয় অঞ্চলে উষ্ণ-আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বিরাজ
করে।
W কোনো বস্তুকে প্রতি সেকেন্ডে ১১.২ কিমি বেগে ওপরের দিকে ছুঁড়লে সেটি আর নীচে
পড়ে না কেন?
à কোনো বস্তুকে প্রতি সেকেন্ডে ১১.২ কিমি বেগে ওপরের দিকে ছুঁড়লে সেটি আর নীচে
পড়ে না, কারণঃ কোনো বস্তুকে প্রতি সেকেন্ডে ১১.২ কিমি বেগে
(মুক্তিবেগে) ওপরের দিকে ছুঁড়লে সেটি আর পৃথিবীর দিকে ফিরে আসে না, কারণ সেটি তখন পৃথিবীর মহাকর্ষীয় আকর্ষণের বাইরে চলে যায়।
মুক্তিবেগের মান বস্তুর ভরের ওপর নির্ভর করে না—অর্থাৎ ছোটো বড়ো সব বস্তুর
ক্ষেত্রেই মুক্তিবেগ সমান হয়। উদাহরণঃ রকেটের সাহায্যে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ
করা হয় এই মুক্তিবেগের সাহায্যে।
------------- X -------------
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর প্রতিটি প্রশ্নের
মানঃ 5
১/ পৃথিবীর পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতির ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তরঃ পৃথিবীর পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতির ফলাফলঃ
∎ সংঞ্জাঃ নিজের মেরদন্ডের ওপর অবিরাম ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট পথে, নির্দিষ্ট
দিকে (ঘড়ির কাটার বিপরীতে) এবং নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করছে।
পৃথিবীর এই গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলে।
∎ ফলাফলঃ পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে—
à ১/ দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধিঃ সূর্যকে প্রদক্ষিণ
করার সময় পৃথিবীর মেরুরেখা তার কক্ষতলের সাথে ৬৬১/২০
কোণে অবস্থান করে। ফলে সূর্য কখনো উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর, আবার
কখনো দক্ষিন গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। এরফলে উত্তর এবং
দক্ষিন গোলার্ধে বছরের বিভিন্ন সময়ে দিনরাতের দৈর্ঘ্যের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
à ২/ ঋতু পরিবর্তনঃ সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব বছরের
বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবীর মেরুরেখা তার কক্ষতলের সাথে ৬৬১/২০
কোণে হেলে থাকার ফলে এবং পৃথিবী গোলাকার হওয়ার ফলে ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সূর্যরশ্মি
একই কোণে পড়ে না। কোথাও লম্বভাবে, কোথাও তির্যকভাবে পড়ার ফলে বিভিন্ন স্থানের
তাপের তারতম্য দেখা যায়। এইভাবে উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি অনুযায়ি বছরের বিভিন্ন সময়ে
নানান স্থানে নানান ঋতু বিরাজ করে।
·
উত্তর ও দক্ষিন গোলার্ধের ঋতুচক্রঃ
পরিক্রমণের সময়
|
উত্তর গোলার্ধের ঋতুচক্র
|
দক্ষিন গোলার্ধের ঋতুচক্র
|
২১ মার্চ থেকে ২১ জুন
|
গ্রীষ্মকাল
|
শীতকাল
|
২১ জুন থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর
|
শরৎকাল
|
বসন্তকাল
|
২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর
|
শীতকাল
|
গ্রীষ্মকাল
|
২২ ডিসেম্বর থেকে ২১ মার্চ
|
বসন্তকাল
|
শরৎকাল
|
à
সূর্যের আপাত বার্ষিকগতিঃ পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির ফলে আকাশে
সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি লক্ষ্য করা যায়। সূর্যের এই আপাত বার্ষিক গতি উত্তরে
কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে দক্ষিনে মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ২১ জুন
থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সূর্য একটু একটু করে দক্ষিনে সরে যায়। আবার ২২ ডিসেম্বরের
পর থেকে সূর্য ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরে যায়। সূর্য ২১ জুন কর্কটক্রান্তি রেখা, ২৩
সেপ্টেম্বর নিরক্ষরেখা এবং ২২ ডিসেম্বর মকরক্রান্তি রেখার ঠিক ওপরে অবস্থান করে।
সূর্যের এই বার্ষিক গতিপথকে রবিমার্গ বা সূর্যের আপাত বার্ষিকগতি বলে।
------------- X -------------
২/ পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের কারণ আলোচনা করো।
উত্তরঃ ঋতু পরিবর্তনঃ
∎ সংঞ্জাঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত, বসন্ত—এই চারটি ঋতু পরপর আবির্ভূত
হয়, একেই ঋতুচক্র বলে।
∎ কারণঃ যেসব কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ঋতু পরিবর্তন হয়,
সেগুলি হল—
১/ পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতিঃ পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলকের মতো। ফলে প্রতিটি অংশ একই সাথে
সূর্যালোক পায় না। এতে উষ্ণতার তারতম্য ঘটে ও ঋতু পরিবর্তন হয়।
৩/ পৃথিবীর পরিক্রমণ গতিঃ পৃথিবী উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে নাভিতে রেখে পরিক্রমণ
করে চলেছে। ফলে সৃষ্টি হয় সূর্যের আপাত বার্ষিকগতি বা রবিমার্গ। ফলে উষ্ণতার
তারতম্য ও ঋতু পরিবর্তন হয়।
৪/ পৃথিবীর মেরুরেখার ৬৬১/২০
কোণে অবস্থানঃ পৃথিবীর মেরুরেখা কক্ষতলের সাথে
৬৬১/২০ কোণে হেলে অবস্থিত। উপরন্তু কক্ষপথে
প্রতিটি অবস্থানেই মেরুরেখা সমান্তরাল থাকে। তাছাড়া মেরুরেখা সর্বদা একই দিকে
অবস্থিত। তাই উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি ও ঋতু পরিবর্তন ঘটে।
৫/ পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথঃ পৃথিবীর কক্ষপথটি গোলাকার হলে সর্বদা সূর্য থেকে পৃথিবীর
দূরত্ব একই হত। সেক্ষেত্রে উষ্ণতার পার্থক্য ঘটতো না। কিন্তু কক্ষপথ উপবৃত্তাকার
হওয়ায় উষ্ণতার পার্থক্য ঘটে। ফলে ঋতু পরিবর্তন হয়।
------------- X -------------
৩/ পৃথিবীতে কীভাবে দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি হয়? অথবা, পৃথিবীতে কীভাবে
দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস-বৃদ্ধি হয়?
উত্তরঃ বছরের বিভিন্ন সময় কক্ষপথে পৃথিবীর অবস্থান সূক্ষভাবে লক্ষ করলে পৃথিবীতে
দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি কীভাবে হচ্ছে তা বোঝা যায়।
১/ কর্কটসংক্রান্তিঃ ২১ জুন তারিখে পৃথিবী কক্ষপথের এমন
এক স্থানে অবস্থান করে যে দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে
বেশি ঝুঁকে থাকে। ওই দিন সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে ওই
দিন উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড়ো দিন এবং সবচেয়ে ছোটো রাত্রি হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে
এর ঠিক বিপরীত অবস্থা দেখা যায়।
২/ কর্কটসংক্রান্তির পরবর্তী সময়েঃ ২১ জুনের পর থেকে দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে এবং উত্তর গোলার্ধ সূর্য থেকে
দূরে সরতে থাকে। তখন থেকে সূর্যের দক্ষিণায়ন শুরু হয় এবং উত্তর গোলার্ধে ক্রমশ দিন
ছোটো ও রাত বড়ো হতে থাকে। দক্ষিণ গোলার্ধে এই সময় ঠিক এর বিপরীত ঘটনা ঘটে।
৩/ জলবিষুবঃ ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে পৃথিবী কক্ষপথের এমন এক স্থানে
অবস্থান করে যেখান থেকে উভয় গোলার্ধ সমান দূরত্বে থাকে এবং উভয় গোলার্ধে
দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়।
৪/ মকরসংক্রান্তিঃ ২২ ডিসেম্বর তারিখে সূর্য
মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরন দেয়। ওই দিন দক্ষিণ গোলার্ধে সব থেকে বড়ো দিন
ও ছোটো রাত হয়। উত্তর গোলার্ধে এর ঠিক বিপরীত অবস্থা ঘটে।
৫/ মকরসংক্রান্তির পরবর্তী সময়েঃ ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে সরতে থাকে। ফলে দক্ষিণ
গোলার্ধে ক্রমশ দিন ছোটো ও রাত বড়ো হতে থাকে। উত্তর গোলার্ধে এই সময় ঠিক এর বিপরীত
ঘটনা ঘটে।
৬/ মহাবিষুবঃ ২১ মার্চ তারিখে পৃথিবী কক্ষপথের এমন এক স্থানে আসে,
যে উভয় গোলার্ধের দূরত্ব সূর্য থেকে সমান হয় এবং পৃথিবীতে দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য
পুনরায় সমান হয়।
v
:-: অনুশীলনী :-:
|
সংক্ষিপ্ত / সংঞ্জামূলক প্রশ্নোত্তরঃ প্রতিটি প্রশ্নের মানঃ ২
1)
পৃথিবীর পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতি কাকে বলে?
2)
সৌর বৎসর বা সৌরবর্ষ কী?
3)
ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বিঞ্জানীরা আন্টার্কটিকা অভিযান করেন কেন?
4)
অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার কাকে বলে?
5)
ছায়াবৃত্তের ঋতুভিত্তিক তারতম্যের
কারণ কী?
6)
দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির কারণ
লেখো।
7)
মহাবিষুব ও জলবিষুব কাকে বলে?
8)
সুমেরু প্রভা ও কুমেরু প্রভা কাকে বলে?
9)
২১ মার্চকে মহাবিষুব বলা হয় কেন?
10)
শীতকালে সূর্যকে বড়ো দেখায় কেন?
11)
গ্রীষ্মকালে সূর্যকে ছোটো দেখায়
কেন?
12)
মুক্তিবেগ কাকে বলে?
v
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক
প্রশ্নোত্তরঃ প্রতিটি প্রশ্নের মানঃ ৩
1)
পরিক্রমণ গতিকে বার্ষিক গতি বলে কেন?
2)
পৃথিবীর অনুসূর ও অপসূর অবস্থান বলতে কী বোঝো?
3)
পৃথিবীর অনুসুর ও অপসূর অবস্থানের
ফলাফল লেখো।
4)
ছায়াবৃত্ত বা আলোকবৃত্ত কাকে বলে?
5)
নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা গ্রীষ্মকাল
থাকে কেন?
6)
পৃথিবীর কোন্ অঞ্চলে বছরের সবসময়
গ্রীষ্মকাল এবং কোন্ বছর সারা বছরই শীতকাল?
7)
উত্তর গলার্ধে শীতকালের তুলনায়
গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব এক সপ্তাহ বেশি কেন?
8)
মেরু অঞ্চলে একটানা ৬ মাস দিন ও ৬
মাস রাত্রি হয় কেন?
9)
নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা গ্রীষ্মকাল
কেন? অথবা, নিরক্ষরেখায় কেন ঋতু পরিবর্তন হয় না?
10)
কোনো বস্তুকে প্রতি সেকেন্ডে ১১.২
কিমি বেগে ওপরের দিকে ছুঁড়লে সেটি আর নীচে পড়ে না কেন?
v
টীকা লেখোঃ প্রতিটি প্রশ্নের মানঃ ২/৩
1)
নিশীথ সূর্য ও নিশীথ সূর্যের দেশ।
2)
মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি বা আরোরা।
3)
মকরসংক্রান্তি।
4)
কর্কটসংক্রান্তি।
5)
সূর্যের বার্ষিক আপাতগতি বা
রবিমার্গ।
6)
ঋতুচক্র।
7)
ছায়াবৃত্ত বা আলোকবৃত্ত।
8)
বিষুব।
v
পার্থক্য লেখোঃ প্রতিটি প্রশ্নের মানঃ ৩/৫
1)
পৃথিবীর কক্ষ বা কক্ষপথ ও কক্ষতল।
2)
পৃথিবীর অনুসুর ও অপসূর অবস্থান।
3)
সুমেরু প্রভা ও কুমেরু প্রভা।
4)
কর্কটসংক্রান্তি ও মকরসংক্রান্তি।
v
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ প্রতিটি প্রশ্নের মানঃ ৫
1)
পৃথিবীর পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতির
ফলাফল আলোচনা করো।
2)
পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের কারণ
আলোচনা করো।
3)
পৃথিবীতে কীভাবে দিন-রাত্রির
হ্রাস-বৃদ্ধি হয়? অথবা, পৃথিবীতে কীভাবে দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস-বৃদ্ধি হয়?
0 comments:
Post a Comment