বেগম রোকেয়া |
বেগম রোকেয়া
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (সাহিত্যসেবী মহলে তিনি বেগম রোকেয়া নামেই সমধিক পরিচিত; ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ - ৯ ডিসেম্বর ১৯৩২) হলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তাঁকে বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়। তার প্রকৃত নাম "রোকেয়া খাতুন" এবং বৈবাহিকসূত্রে নাম "বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন"।
জন্ম
রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর
উপজেলার অর্ন্তগত পায়রাবন্দ গ্রামে। তাঁর পিতা
জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। তাঁর মাতা
রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই বোন করিমুননেসা ও হুমায়রা, আর তিন ভাই যাদের একজন
শৈশবে মারা যায়।
ব্যক্তিগত ও কর্মজীবন
প্রথম জীবন
তৎকালীন মুসলিম
সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তাঁর বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয় নি, তাদেরকে ঘরে আরবি ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার
বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও করিমুন্নেসাকে ঘরেই
গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান।
সাহিত্যচর্চার সূচনা
১৮৯৮ সালে ১৮ বছর বয়সে
রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট
সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। বিয়ের পর তিনি "বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত
হোসেন" নামে পরিচিত হন। তাঁর স্বামী মুক্তমনের মানুষ ছিলেন, রোকেয়াকে তিনি লেখালেখি
করতে উৎসাহ দেন এবং একটি স্কুল তৈরির জন্য অর্থ আলাদা করে রাখেন। রোকেয়া
সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্প
লিখে সাহিত্যজগতে তার অবদান রাখা শুরু হয়।
মুসলিম সমাজে নারীশিক্ষা বিস্তার
১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন
মৃত্যুবরণ করেন। এর পাঁচ মাস পর বেগম রোকেয়া ভাগলপুরে "সাখাওয়াত মেমোরিয়াল
গার্লস স্কুল" নামে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯১০ সালে সম্পত্তি নিয়ে
ঝামেলার ফলে স্কুল বন্ধ করে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। এখানে ১৯১১ সালের ১৫ই মার্চ তিনি সাখাওয়াত
মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল পুনরায় চালু করেন। প্রাথমিক অবস্থায় ছাত্রী
ছিল ৮ জন। চার বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪-তে। ১৯৩০সালের নাগাদ এটি হাই
স্কুলে পরিণত হয়।
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড
স্কুল পরিচালনা ও
সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোকেয়া নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক
কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখেন। ১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম বাঙালি
নারীদের সংগঠন আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সভায় তাঁর
বক্তব্য তুলে ধরেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত
বাংলার নারী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
রচনা
তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য
রচনা Sultana’s Dream। যার অনূদিত রূপের নাম সুলতানার স্বপ্ন। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক
ধরা হয়। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল : পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর। নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর
লেখা প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে
তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। হাস্যরস
আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে
তুলেছেন। তাঁর রচনা দিয়ে তিনি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, ধর্মের নামে নারীর প্রতি
অবিচার রোধ করতে চেয়েছেন, শিক্ষা আর পছন্দানুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ ছাড়া যে
নারী মুক্তি আসবে না --তা বলেছেন।
"কোনো ভগ্নী মস্তক উত্তোলন
করিয়াছেন, অমনি ধর্মের দোহাই বা
শাস্ত্রের বচন-রূপ অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে। ... আমাদিগকে অন্ধকারে
রাখিবার জন্যে পুরুষগণ এই ধর্মগ্রন্থগুলি ইশ্বরের আদেশ বলিয়া প্রচার করিয়াছেন।
... এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষরচিত বিধিব্যবস্থা ভিন্ন কিছুই নহে। মুনিদের বিধানে যে
কথা শুনিতে পান, কোনো স্ত্রী-মুনির বিধানে
হয়ত তাঁহার বিপরীত নিয়ম দেখিতে পাইতেন। ...
ধর্ম আমাদের দাসত্বের বন্ধন দৃঢ় হইতে দৃঢ়তর করিয়াছে; ধর্মের
দোহাই দিয়া পুরুষ এখন রমণীর উপর প্রভুত্ব করিতেছেন।" --- বেগম রোকেয়া
মৃত্যু
১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া মৃত্যুবরণ
করেন। সেসময় তিনি ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন। তাঁর কবর উত্তর কলকাতার
সোদপুরে অবস্থিত যা পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অমলেন্দু দে আবিষ্কার করেন ।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
স্মরণে বাংলাদেশ সরকার একটি গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর
উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে পৈতৃক ভিটায় ৩ দশমিক ১৫ একর ভূমির উপর নির্মিত হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি
কেন্দ্র। এতে অফিস ভবন, সর্বাধুনিক গেস্ট হাউজ, ৪ তলা ডরমেটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি ইত্যাদি
রয়েছে। স্মৃতিকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের শিশু
ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
NOTICE OF
RIGHTS
No part
of this publication may be reproduced, transcribed, stored in a retrieval
system, or translated into any other language or computer language, in any form
or by any means, electronic, mechanical, magnetic, optical, chemical, manual,
or otherwise, without the prior written permission of Edureja Academy except under the
terms of a Edureja Academy License Agreement.
Content
of Copyright : © Edureja Academy & Rejaul Hoque Sarkar - http://edureja.blogspot.com
Content Source : Wikipidea
Not bad
ReplyDeleteVery Very bad
ReplyDeleteVery good
ReplyDelete