Bengali Essay Writing / বাংলা প্রবন্ধ রচনা - ২য় পর্ব - EDUREJA

Latest News

Bengali Essay Writing / বাংলা প্রবন্ধ রচনা - ২য় পর্ব

প্রবন্ধ রচনা – 2য় পর্ব
লেখকঃ রাজীব ঘোষ ও রেজাউল হক সরকার   : :   সম্পাদনায়ঃ রেজাউল হক সরকার

শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক
Download this Part :


র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ / র‍্যাগিং কুপ্রথা নিবারণে ছাত্রসমাজ ও জনগণের ভূমিকা
ভূমিকাঃ সভ্যতার তথাকথিত অগ্রগতিমূলক বহু বিবর্তনের পরেও মানুষের মধ্যে আজও একটা পশু বিরাজ করছে। সে অকারণে উৎপীড়কের ভূমিকা নেয়। এর কোনো যুক্তিসিদ্ধ ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না। এই রকম উৎপীড়নকে র‍্যাগিং বলে। ছাত্রাবাসে অনুষ্ঠিত র‍্যাগিং একটি অনুরূপ বিষয় যাকে বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। আমাদের সমাজের এটি অন্যতম জ্বলন্ত সমস্যা। এর প্রকৃতি অনুধাবন এবং এ থেকে পরিত্রাণের পন্থাপদ্ধতি অনুসন্ধান বর্তমানে একান্ত প্রয়োজন।
র‍্যাগিং কীঃ র‍্যাগিং শব্দটির আভিধানিক অর্থ রসিকতা বা কৌতুকের নামে অত্যাচার করা, যা উৎকট ও কুৎসিৎ কৌতুক-ক্রিড়া, অথবা অসভ্য আচরণাদির দ্বারা পরিহাস ও জ্বালাতন। অর্থাৎ র‍্যাগিং হল একটি অত্যাচারমূলক ক্রিয়াকর্ম। একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির উপর বা একদল ছাত্র অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের উপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মৌখিক অশ্লীল গালিগালাজ বা অশ্লীল ক্রিয়াকলাপ করে বা শারিরীক অত্যাচার করে নিজেরা এক ধরনের উল্লাসে মেতে ওঠে। এইরূপ আচরণকে র‍্যাগিং বলা হয়। তা ছাড়া অসভ্য আচরণ দ্বারা বা দাঙ্গাবাজি করে কোনো কোন ছাত্র-ছাত্রীকে বিরক্ত করলে বা কষ্ট দিলে অথবা ভীতি, আতঙ্ক ইত্যাদি সৃষ্টি করে তার মানসিক ক্ষতি করলে, সেই আচরণকে র‍্যাগিং বলা হবে। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের অনুরূপ মর্মে একটি রায়ে এই কথাই বলা হয়েছে।
র‍্যাগিং-এর প্রক্রিয়াঃ সাধারণভাবে ছাত্রাবাস বা ছাত্রীনিবাসে ও কলেজের মধ্যে নবাগত ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুরানো ছাত্রছাত্রীরা দৈহিক ও মানসিকভাবে নানা রকম পীড়ন চালিয়ে যায়। নানা অজুহাতে নবাগতদের বোকা বানানো, উদ্ভট প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য করা, প্রচন্ড শীতের মধ্যে স্নান করতে বাধ্য করা, মাটিতে দীর্ঘ নাকখত দিতে বলা, জোর করে মদ খাইয়ে দেওয়া, শরীরে জলন্ত সিগারেটের ছাঁকা দেওয়া ইত্যাদি নবাগতদের জীবন একেবারে অতিষ্ট করে তোলে। উঁচু ক্লাসের দাদাদিদিদের এইসব নির্দেশ পালন করতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠা বা অবহেলা দেখানো হলে কুৎসিৎ গালিগালাজ, চড়-চাপড় ইত্যাদি উপরি পাওনা হয়। বিভিন্ন কলেজে, ছাত্রাবাসে এই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলেও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এর প্রাদুর্ভাব বেশি।
র‍্যাগিং-এর যুক্তিঃ র‍্যাগিং-এর যুক্তি হিসেবে বলা হয় যে, নবাগত ছাত্রছাত্রীদের সংশ্লিষ্ট কলেজের উপযুক্ত করে তোলার জন্য নাকি র‍্যাগিং। এতে নাকি পুরনোদের সঙ্গে নতুনদের যোগাযোগ নিবিড় হয়। কিন্তু এইধরনের যুক্তি নেহাতই র‍্যাগিং করার পক্ষে মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
র‍্যাগিং-এর কুফলঃ র‍্যাগিং যে কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে তা আমরা প্রতিনিয়ত জানতে পারি সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা। র‍্যাগিং-এর শিকার হয়ে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী কলেজ ছাড়তে বাধ্য হয়। অনেকে আবার মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। কেউ কেউ শারিরীকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। র‍্যাগিং-এর জন্য মৃত্যু ঘটেছে এমন ঘটনাও বিরল। এই সব ঘটনা চোখে পড়লে অনেক ছাত্রছাত্রী বিশেষ বিশেষ কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে ভয় পায়।
প্রতিকারের উপায়ঃ ছাত্রাবাসে নিপীড়নমূলক এই জঘন্য প্রথার অবসানকল্পে কতগুলি কার্যকরী পদক্ষেপ এখনই নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলি হল—(১) নবাগত ছাত্রছাত্রীদের পুরাতন ছাত্রদের সাথে একত্র না রেখে আলাদা হোস্টেলে রাখতে হবে। (২) নবাগত ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘ছাত্রবরণ’ অনুষ্ঠানটি কলেজের কনফারেন্স হলে বা অডিটরিয়ামে শিক্ষক, কর্মচারী ও পুরাতন সকল ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে ছাত্রভর্তি হওয়ার পরপরই সেরে ফেলা উচিত। (৩) কলেজ কর্তৃপক্ষকে নতুন ছাত্রছাত্রীদের উপর যথাসম্ভব নজরদারি করতে হবে। (৪) এ সমস্ত ব্যবস্থাগ্রহণ সত্ত্বেও কোন র‍্যাগিং-এর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টি র‍্যাগিং অ্যাক্ট অনুযায়ী আইনী ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে র‍্যাগিং করার উপর একটি ভীতির সৃষ্টি হয়।
র‍্যাগিং-এর বিরুদ্ধে সরকারি ব্যবস্থাঃ ইতিমধ্যে ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট ‘অ্যান্টি র‍্যাগিং অ্যাক্ট’ চালু করেছেন। তাতে  র‍্যাগিং-এ অভিযুক্ত ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে সরকার ফৌজদারি মামলা  করা যাবে। এবং  তাদের জামীন
অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানায় বিচার বিভাগীয় হেফাজতে নেওয়া যাবে।
উপসংহারঃ সমাজের বিভিন্ন স্তরের চাপে, সর্বোপরি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শুভ চেতনার জাগরণে আশা করি এই অমানবিক কুপ্রথা অচিরেই বিলুপ্ত হবে। আমরা সেই শুভ প্রভাতের জন্য অপেক্ষামান।

--------- x ---------


সমাজ সেবায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকা / সমাজের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের কর্তব্য / সমাজকল্যাণে ছাত্র-ছাত্রীদের কর্তব্য / ছাত্র-ছাত্রীদের সামাজিক দায়িত্ব / লেখাপড়ার বাইরে ছাত্র-ছাত্রীদের সামাজিক কর্তব্য / সমাজকল্যাণ ও ছাত্রসমাজ / দেশের ও সমাজের ভবিষ্যত হল ছাত্রসমাজ
ভূমিকাঃ সমাজ একটা সংঘবদ্ধ ব্যবস্থা, মনুষ্যত্ব বিকাশের ক্ষেত্রভূমি। সমাজের মধ্যে দিয়েই মানুষ তার পাশব প্রবৃত্তিকে অতিক্রম করে মনুষ্যত্ব অর্জন করে। রবীন্দ্রনাথের কথায়, “মানুষ জন্মায় জন্তু হয়ে, কিন্তু এই সংঘবদ্ধ ব্যবস্থার মধ্যে অনেক দুঃখ করে সে মানুষ হয়ে ওঠে।” কাজেই যে-সংঘবদ্ধ ব্যবস্থা বা সমাজ মানুষকে মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে, তাকে অবশ্যই ক্লেদমুক্ত রাখা দরকার, সুন্দর করে গড়ে তোলা দরকার। এর এ কাজে প্রতিটি সামাজিক মানুষের কিছু না কিছু কর্তব্য থাকে। ছাত্রছাত্রীরাও তার ব্যতিক্রম নয়। অধ্যয়ন ছাত্রছাত্রীদের প্রধান লক্ষ্য, একথা মেনে নিয়েও বলা যায়, অধ্যয়নের পাশাপাশি সমাজের প্রতিও তাদের অনেক কর্তব্য আছে।
সমাজের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কঃ ছাত্রগণ ভিন্ন গ্রহবাসী নয়। তারা এই সমাজের সব থেকে প্রাণবান, স্তেজ, বলিষ্ঠতম অংশীদার। তারাই ভবিষ্যৎ সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক, সমাজের মেরুদন্ড। তাই সমাজ যেমন জীবনের প্রস্তুতিপর্বে ছাত্রদের সর্ববিধ সুযোগ-সুবিধা দানের চেষ্টা করবে তেমনি ছাত্ররাও পুঁথিগত পাঠ ছাড়াও সমাজসেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে যেখানে অন্যায়, অবিচার, সামাজিক নিষ্পেষণ চলছে তা দূরীভূত করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
ছাত্রসমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ
(ক) সেবাপরায়ণতাঃ জনগণের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার মধ্যেই নিহিত আছে শিক্ষার সার্থকতা। অল্পবয়সী ছাত্রদের গতিশীল, স্বার্থচিন্তা ও বৈষয়িকচিন্তনহীন নিঃস্বার্থপরতা ও সেবাধর্মে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। এইভাবে ছাত্রমনে সেবাধর্মী পবিত্র আদর্শবোধ চিরস্থায়ী আসনলাভে তাদের এক সংবেদনশীল নাগরিকে পরিণত করবে।
(খ) নিরক্ষরতা দূরীকরণঃ আমাদের দেশের সার্বিক শিক্ষার অবস্থা খুবই খারাপ। ভারতবর্ষে নিরক্ষরতা একটি সামাজিক অভিশাপ। এই অভিশাপ থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। ছাত্ররা নিজেদের শিক্ষিত করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে নিরক্ষর ব্যক্তিদের সাক্ষর করে তোলার উদ্যোগী হতে পারে। ছাত্ররাই ভারতভূমিকে শিক্ষার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করতে পারে।
(গ) স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষাঃ আমাদের দেশে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। গ্রাম ও শহরের নানা জায়গায় নানা রোগের জীবাণু ছড়িয়ে আছে। অপরিচ্ছন্নতা দূরীকরণে ছাত্ররা নিজেরাই হাত লাগায়। গ্রামে ও শহরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তোলে। সমাজের অধিকাংশ লোকই আজ সর্বনাশা ড্রাগের নেশায় আচ্ছন্ন। এই পতনের হাত থেকেও তাদের সুষ্ঠু স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ছাত্রছাত্রীরা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে।
(ঘ) প্রথা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইঃ কুসংস্কারাচ্ছন্ন আমাদের সমাজ। এর কারণ অঞ্জতা এবং প্রথার প্রতি নির্বিচার আনুগত্য। মানুষের অঞ্জতা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আজও নানান তুকতাক, তাবিজ-মাদুলি নিয়ে ভন্ড সাধুদের রমরমা চলছে। ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে সমাজকে কুসংস্কারগুলি থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে। পণপ্রথার মতো একটি সামাজিক পাপের বিনাশেও ছাত্রসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে সমাজে প্রথা ও কুসংস্কার বিলুপ্তি সম্ভব হবে।
(ঙ) প্রতিবাদ ও জাতীয় সংহতি রক্ষাঃ সমাজে প্রতিনিয়ত অন্যায়-অবিচার ঘটেই চলেছে। এসব ক্ষেত্রে ছাত্রদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ বিষ প্রবল হয়ে উঠেছে। এই সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীকে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে। ছাত্রশক্তিই একমাত্র পারে দেশের জাতীয় সংহতি রক্ষা করতে।
উপসংহারঃ ছাত্রসমাজ একটি বৃহৎ শক্তি। এই শক্তি যদি সমাজকল্যাণে নিয়োজিত হয়, তাহলে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত। ওরা “পদ্মকোশের বজ্রমণি ওরাই ধ্রুব সুমঙ্গল।” ছাত্রছাত্রীরা সচেষ্ট হলে একদিন না একদিন সেই আদর্শ সমাজ গড়ে উঠবেই। দেশবাসীর কল্যাণ আশিসে তাদের জীবন হবে সার্থক। নির্ভীক সমাজসেবী এইসব পরাগত প্রাণ ছাত্রছাত্রীদের মন্ত্র হোক—
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী   
        ভয় নাই, ওরে ভয় নাই,
নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান
        ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।”

--------- x ---------


পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকা
ভূমিকাঃ আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে একটা সুস্থ পরিবেশের দরকার হয়। প্রাচীনকালে লোকসংখ্যা কম ছিল বলে পরিবেশও দূষণমুক্ত ছিল, কিন্তু এখন অত্যধিক লোকসংখ্যার জন্য পরিবেশ একটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে প্রকৃতিও তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।
পরিবেশ দূষণঃ খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য মানুষ এখন পরিবেশকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগাচ্ছে। মানুষ সবুজ বন কেটে ফেলছে, ফলে অক্সিজেনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। যানবাহন আর কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানুষ সর্দিকাশি, হাঁপানি, নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার প্রতিনিয়ত জলকে দূষিত করে তুলছে। আবার শহরের নোংরা আবর্জনা, প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার মাটিকেও বিষাক্ত করছে। যানবাহনের প্রবল শব্দ, আতস বাজির বিকট শব্দ মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করে দিচ্ছে ও চিরবধিরতার সৃষ্টি করছে। দেশে দেশে পারমাণবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিবেশকে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবেশ দূষণের কবলে পরে হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
প্রতিকার / ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাঃ সন্তান অসুস্থ হলে যেমন মা তাকে সুস্থ করতে এগিয়ে আসে, ঠিক তেমনি পৃথিবীর এই ভয়াবহ দুর্দিনে পৃথিবীর প্রত্যেক নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে দেশের তরুণ ছাত্রসমাজ। কেননা তারাই ভবিষ্যতের সুনাগরিক। পরিবেশ সম্পর্কে যারা সচেতন নয়, তাদের সচেতন করার দায়িত্ব ছাত্রছাত্রীদের নিতে হবে। সমাজ ও বিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে তারা সচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারে। দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য তারা আলোচনাসভা ও পথ নাটিকার আয়োজন করতে পারে। সর্বোপরি সরকারকেও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। পরিবেশ দূষণের উপর তাদের পূর্বের আইনগুলি সংশোধন করে আরও কঠিন আইন চালু করতে হবে। তবে শুধু আইন করলেই হবে না, সেগুলি যাতে প্রয়োগ করা যায় সেবিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।
উপসংহারঃ পরিবেশ দূষণ সুস্থ সমাজের পক্ষে একটা অভিশাপ। তাইতো প্রতি বছর ৫-ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসাবে পালন করা হয়। তাই এই সুন্দর পৃথিবীকে বাঁচাতে পৃথিবীর সমস্ত দেশগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে এবং হাতে হাত রেখে একটি দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ার শপথ গ্রহণ করতে হবে। তবেই পরবর্তী প্রজন্ম সুস্থভাবে পৃথিবীতে বসবাস করতে পারবে।

এই প্রবন্ধটির লেখক : রাজীব ঘোষ, শিক্ষক (নাককাটি হাই স্কুল, তুফানগঞ্জ, কোচবিহার)

--------- x ---------


নিয়মানুবর্তিতা
ভূমিকাঃ নিয়মানুবর্তিতা থেকে শৃঙ্খলার জন্ম। যে সমাজ নিয়ম অনুসারে চলে না, বা নিয়ম মানে না, সে সমাজে কোনো শৃঙ্খলাও থাকে না। অথচ, সুশৃঙ্খল না হলে মানুষের পক্ষে আত্মরক্ষা করা সম্ভব নয়, পদে পদে তার জীবন হয় বিপর্যস্ত বা বিড়ম্বিত। বিশ্বপ্রকৃতির সকল কিছুই সুনির্দিষ্ট কোন না কোন নিয়মকে অনুসরণ করে চলেছে। সৌরজগতে গ্রহ-উপগ্রহের আবর্তন, ঋতু-পরিবর্তন, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ বা মানুষের জন্ম-মৃত্যু, সবকিছুর মধ্যেই আমরা নিয়মের অনুবর্তিতা দেখতে পাই। সেই নিয়মানুবর্তিতা যে বিশ্ববিধাতা বা বিশ্বপ্রকৃতির অমোঘ বিধান।
নিয়মের সৃষ্টিঃ মানব সভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাস অনুধাবন করলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, স্বভাবধর্মেই মানুষ একদিন নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন উপলব্ধি করেছিল। অর্ধ সভ্যতার স্তর থেকে মানুষ যেদিন সভ্যতার স্তরে এসে পৌঁছাল, সেইদিনই যে সমাজের ভিত গড়ল এবং সেই ভিত যাতে সুদৃঢ় হয় সেজন্য সে কতকগুলি নিয়মেরও সৃষ্টি করল। সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সমাজের মধ্যে ক্রমশ নিয়মানুবর্তিতা দেখা দিল সামাজিক শৃঙ্খলা, সুখ ও শান্তি।
নিয়মের কল্যাণঃ নিয়ম মেনে চলতে গিয়ে মানুষ দেখল যে, সমাজের সর্বত্র একটা শৃঙ্খলাভাব বিরাজ করছে। সে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে তার পারিবারিক ও সামাজিক জীবন হয়েছে সুন্দর ও শান্তিময়। মানুষ একদিন নিয়ম করেছিল যে, বিনা কারনে একে অপরকে আঘাত করবে না, অপরের দ্রব্য জোর করে কেরে নেবে না, পারস্পরিক সম্প্রীতির মনোভাব নিয়ে পাশাপাশি বসবাস করবে। একে অপরের দুঃখ কষ্টে ও বিপদে যথাসাধ্য সাহায্য করবে। এই ধরনের নিয়ম না থাকলে মানব সমাজের ভিত ভেঙে পড়ত, উচ্ছৃঙ্খলতা ও অনিয়মের বন্যতার পুনরাবির্ভাব হত।
শৃঙ্খলা ও আইনঃ নিয়মানুবর্তিতার প্রধান সুফল—শৃঙ্খলা। এই শৃঙ্খলার প্রয়োজন ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক জীবনে ও সামাজিক জীবনে। রাজতন্ত্রে, গণতন্ত্রে সর্বত্র শৃঙ্খলা ব্জায় থাকা অত্যাবশ্যক, যুগে যুগে মানুষ তা স্বীকার করেছে। কারণ অনিয়ম বা উচ্ছৃঙ্খলা প্রশ্রয় দিলে যে কোনো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ে, মানুষের অভিঞ্জতাই তার সাক্ষী। এই কারনে আইন কানুনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে মানুষ তা মেনে চলার চেষ্টা করে। আইন কানুনের কঠোরতা অনেক ক্ষেত্রে হয়তো অসুবিধা হয়, কিন্তু সমাজের বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে সেই কঠোরতাও প্রয়োজন। চুরি করলে শাস্তি পেতে হবে—এইরূপ কোনো সামাজিক আইন না থাকলে সমাজে কি আর নিরাপদে বাস করা চলত!
নিয়মানুবর্তিতায় জীবনের উন্নতি বিধানঃ নিয়মানুবর্তিতায় শুধু যে সমাজের উন্নতি হয় তা নয়, ব্যক্তিজীবনের উন্নতিও নির্ভর করে এই সদ্‌গুণের উপর। ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠা, প্রাতঃকৃত্যাদি সেরে প্রাতরাশ গ্রহণ, সাংসারিক কাজকর্ম সেরে স্নানাহার, তারপর কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে কর্তব্যপালন, সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মেলামেশা, রাত্রের আহারের পর নিদ্রা—এই যে সাধারণ নিয়ম, সকলেই এর অনুবর্তী। সব কাজই একটা সুনির্দিষ্ট রীতি বা নিয়ম অনুসারে করতে হয়, নতুবা তাহা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় না। অসুস্থ হলে যেমন নিয়ম মেনে ওষুধ খেতে হয়, তেমনি জীবনের সকল ক্ষেত্রেই নিয়মানুবর্তিতার সুফল দেখা যায়।
নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তাঃ পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সকল রকম জীবনেই নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন। আর রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতা তো অপরিহার্‍্য। আধুনিককালে যারা গণতন্ত্র বা ব্যক্তিস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে নিয়ম-শৃঙ্খলা উপেক্ষা করতে চায়, তারা গণতন্ত্র বা ব্যক্তিস্বাধীনতার মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত। ব্যক্তিস্বাধীনতার অর্থ যে উচ্ছৃঙ্খল নয় তা উপলব্ধি করা প্রয়োজন। নিয়মশৃঙ্খলা না ভেঙে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে মানুষ তার আকাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভ করতে পারে। সাম্রিক বাহিনীতে আমরা নিয়মানুবর্তিতার সুস্পষ্ট রূপটি দেখতে পাই। যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে প্রতি পদে পদে প্রতিটি সৈনিককে সুশৃঙ্খলভাবে অগ্রসর হতে হয় বলে তাদের সামরিক জীবন গড়ে ওঠে কঠোর নিয়মানুবর্তিতায়। ছাত্রজীবনেও কঠোর নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োজন। কারণ ছাত্রজীবনই হল ভবিষ্যত কর্মজীবনের সোপান।
উপসংহারঃ নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন স্বীকার করলেও, অনেকে আবার ব্লেন যে, কঠোর নিয়মানুবর্তিতায় মানুষের জীবন পূর্ণ বিকশিত হয় না এবং অনেক ক্ষেত্রে জীবন হয় বৈচিত্র্যহীন। কঠোর নিয়মানুবর্তিতায় ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র খর্ব হয় সত্য, কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতা যখন স্বেচ্ছাচারিতায় পর্যবসিত হয়, নিয়মের কঠোরতা ভিন্ন তখন আর উপায় কি! কারণ স্বেচ্ছাচারিতায় কোনো মহৎ কর্ম সাধিত হতে পারে না। নিয়মানুবর্তিতার অভাবে শুধু যে বাহ্যজগতে অশান্তি দেখা দেয় তা নয়, নিয়ম উপেক্ষার ফলে মানসিক অশান্তি বা চিন্তাবিক্ষোভের কারণও অনেক ক্ষেত্রে ঘটে।
--------- x ---------


অন্যান্য বিষয়ঃ-
১/
জীবনী বিষয়ক (৭টি)
২/
প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক (৪টি)
VISIT
DOWNLOAD
৩/
বিঞ্জান ও বিঞ্জান চেতনা বিষয়ক (৪টি)
VISIT
DOWNLOAD
৪/
খেলাধুলা, গুণ, নীতি ও চরিত্র বিষয়ক (৩টি)
VISIT
DOWNLOAD
৫/
বিবিধ বিষয়ক  (১৫টি)
VISIT
DOWNLOAD



Written by : Rajib Ghosh & Rejaul Hoque Sarkar
Edited by : Rejaul Hoque Sarkar



                                                 
  • Blogger Comments
  • Facebook Comments

3 comments:

  1. খুব ভালো লাগলো আরো রচনা পাঠাতে থাকুন

    ReplyDelete
  2. দুর্দান্ত রচনা লিখেছেন। 👍👍👍👍👍

    ReplyDelete
  3. Valo laglo aroo pcs type writting provide korle upokriti hobo ..

    ReplyDelete

Item Reviewed: Bengali Essay Writing / বাংলা প্রবন্ধ রচনা - ২য় পর্ব Description: Rating: 5 Reviewed By: Rejaul Hoque Sarkar
Scroll to Top